নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় দুই ছাত্রীকে বেত দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে তাদের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
উপজেলার তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ে শনিবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রাতে শিক্ষার্থীর স্বজনেরা রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ করলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফএম সায়েদ জানান, সপ্তম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে আহত করেছে বলে শিক্ষক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহত দুই শিক্ষার্থী রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএস বাংলা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তাদের একজনের বাড়ি রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বরপা বাগান বাড়ি এলাকায়; বয়স ১৪ বছর। আরেকজনের বাড়ি একই পৌরসভার বরপা কর্নগোপ এলাকায়। তার বয়স ১৩ বছর।
অভিযোগের বরাতে ওসি বলেন, “ঈদ উপলক্ষে শনিবার বরপা হাজী নুর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই আনন্দে ছাত্রীরা সবাই স্কুলের ভেতরে চুমকি মাখামাখি শুরু করে। এ সময় ওই দুই ছাত্রীকে ডেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের রুমে নিয়ে যান শিক্ষক জসিমউদ্দিন। এরপর তাদের বাঁশের বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে মেয়ে দুটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।”
আহত এক শিক্ষার্থীর মামা বলেন, “আমার বোন পোশাক কারখানায় কাজ করে। মেয়েটাকে সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছে; ওর বাবা নেই। আমার ভাগ্নিকে কখনো ওর মাও মারে নাই। সে আমাদের অনেক আদরের। মেয়েটারে এমনভাবে পিটাইছে, ওর শরীরে দাগ আর দাগ। আমাদের এলাকার আরেকটা ছাত্রীরেও মারছে, ওরও একই অবস্থা। আমরা এ বিচার চাই।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জরহর লাল ঘোষ বলেন, “স্কুল ছুটি শুনে ছেলে মেয়েরা সবাই চুমকি নিয়ে মাখামাখি করছিল। তখন বাংলা বিভাগের জসিম উদ্দিন স্যার গিয়ে তাদের বেতের বাড়ি দেন। এ সময় আমি ছুটে গিয়ে তাকে বাধা দেই। পরে ছাত্রীদের মাথায় পানি ঢালা হয়। তখন প্রথমে একজন ছাত্রী অসুস্থ্ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আরেকজনকে। সন্ধ্যায় আমরা তাদের দেখে এসেছি। বিষয়টি শিক্ষা অফিসারও জানেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিক উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। রোববার এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। স্কুল কমিটিও মিটিং ডেকেছে। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষক জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, বিষয়টি শিক্ষা অফিসার দেখছেন। তিনি তদন্ত করবেন। পাশাপাশি কমিটির পক্ষ থেকে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে, সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।